Beloved – Summary in Bangla – Bangla Summary – Characters :
বিলাভড উপন্যাসটি রচনা করেন আমেরিকান লেখক Toni Morrison – টনি মরিসন, যা ১৯৮৭ সালে রচনা করা হয়। আমেরিকান গৃহযুদ্ধের পরে উপন্যাসটি মার্গারেট গার্নারের জীবনের আলোকে লেখা হয়েছিছিল। সে একজন আফ্রিকান আমেরিকান (মহিলা), যিনি ১৮৫৬ সালের জানুয়ারির শেষদিকে ওহিও নামক নদীটি অতিক্রম করে কেন্টাকির দাসত্ব থেকে পালিয়ে ওহিও তে এসেছিলেন। কিন্তু বন্দী হয়ে সে তার সন্তানকে আবার দাসত্বের দলে নিয়ে যাওয়ার চেয়ে বরং হত্যা করেছিল। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ের ঘটনা। তখন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে দাসপ্রথা বিরোধী আন্দোলন বেশ চাঙা হয়ে উঠেছে। এই উপন্যাসে আমরা দেখি সেথি নামের একজন আফ্রিকান বংশদ্ভূত মহিলার দাসত্বের জীবন থেকে মুক্তির গল্প বলা হয়েছে। দাসত্বের জীবনের ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়েছে উপন্যাসটিতে।
Beloved Summary in Bangla
দক্ষিণ যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও (Ohio) রাষ্ট্রের কেনটাকিতে (Kentucky) একটি খামার বাড়ি আছে, যার নাম সুইট হোম (Sweet Home). বাড়ির মালিক মিস্টার গার্নার একজন মানবিক গুনসম্পন্ন মানুষ। তার স্ত্রী মিসেস গার্নারও দয়ালু মনের নারী ছিলেন। তাদের খামার বাড়িতে মোট ছয়জন নিগ্রো কৃতদাস ও দাসী কাজ করতো। তারা হলো পল এ (Paul A), পল ডি (Paul D), পল এফ (Paul F) নামের তিন ভাই এবং সিক্সো (Sixo), হ্যালি (Halle) ও হ্যালির মা বেবি স্যাগস (Baby Suggs). মিস্টার ও মিসেস গার্নার তাদের এই দাসদাসীদের প্রতি যথাসাধ্য মানবিক আচরণ করতেন। তাই দাসদাসীরাও তাদের মালিককে পছন্দ করতো। বেশ ভালোই চলছিলো সুইট হোম নামের মিস্টার গার্নারের এই খামারটি। হ্যালির মা বেবি স্যাগস এর বয়স বেড়ে যাওয়ায় তার পক্ষে খামারে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। যুবক হ্যালি তার মাকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করার ইচ্ছে প্রকাশ করলে মিস্টার গার্নার হ্যালির প্রস্তাবে রাজি হন। হ্যালি সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে অতিরিক্ত কাজ করে যে অর্থ জমায়, সেই অর্থ দিয়ে সে তার মাকে দাসত্ব মুক্ত করে।
মুক্ত হয়ে বেবি স্যাগস (Baby Suggs) উত্তরের এক রাষ্ট্রে সিনসিনাটি (Cincinnati) শহরে চলে যায়। এই শহরে মি. বডুইন (Mr. Bodwin) নামের এক মহৎ লোক ছিল যিনি দাসপ্রথার বিরুদ্ধে ছিল। ফলে মি. বডুইনের সহযোগিতায় বেবি স্যাগস সেখানে স্বাধীনভাবে বসবাস করতে থাকেন। সুখেই দিন কাটছিলো তার। কিন্তু সে ছিলো ওই বাড়িতে বড়ো একা। তাই সে বনের মধ্যে খানিকটা জায়গা পরিষ্কার করে সেখানে এলাকার নিগ্রোদের নিয়ে ধর্মসভার ব্যবস্থা করে। প্রতি সপ্তাহে বেবি স্যাগস সেখানে তার সহজসরল ধর্মীয় দর্শন প্রচার করত। এদিকে সুইট হোম থেকে বেবি স্যাগস চলে যাবার পর, মিসেস গার্নারকে সহযোগিতা করার জন্য তার স্থলে সেথি (Sethe) নামের ১৩ বছরের একটি মেয়েকে কিনে আনা হয়। সেথি তার মা বাবা কাউকেই ঠিক মনে করতে পারত না। সুইট হোমের নতুন পরিবেশ বিশেষ করে পাঁচ পাঁচটা যুবক পুরুষের মাঝখানে সে নিজেকে বড় অসহায় ভাবতে থাকে। মিসেস গার্নারের স্নেহ ভালবাসায় সে এই প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে ধীরে ধীরে মানিয়ে নেয়।
হ্যালির (Halle) প্রতি সেথির মনে একটু দুর্বলতা তৈরি হয়। তার বয়স যখন মাত্র ১৪ বছর, তখন সে হ্যালিকে বিয়ে করতে চায়। মিস্টার ও মিসেস গার্নার রাজি হয়ে দুজনের বিয়ের ব্যবস্থা করে। এ বিয়েতে কোনো পুরোহিত লাগেনি, কোনো খাওয়ার আয়োজন ছিল না, কোনো নাচগানও ছিল না। শুধু সেথির বিছানার বালিশ হ্যালির বিছানাতে স্থানান্তরিত করা হয়। সেথি তার পানির বালতি হাতে নিয়ে খালি পায়ে হ্যালির খড়ের বিছানা পেরিয়ে ওপাশে পৌঁছে যায়। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা এখানেই শেষ। তারপর সেথি আহত হয়। তার দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন এভাবেই শেষ হয়ে যায়। হ্যালি ও সেথির দুটি ছেলে (হাওয়ার্ড এবং বাগলার) ও একটি মেয়ে জন্ম হয়। হঠাৎ করে মিস্টার গার্নার মারা যায়। মিসেস গার্নারও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার পক্ষে একা একা সুইট হোমের খামার চালানো অসম্ভব হয়ে পরে। তাই সে মিস্টার গার্নারের এক ভাইকে সুইট হোম পরিচালনার দায়িত্ব দেয়। দাসদের কাছে সে স্কুলশিক্ষক (School Teacher) হিসেবে পরিচিতি পান।
এই স্কুলশিক্ষক লোকটা ছিল বড় কঠোর, অত্যাচারী, বদমেজাজী, বর্ণবাদী ও নিষ্ঠুর প্রকৃতির মানুষ। সে ও তার দুই ভাগ্নেকে একসাথে নিয়ে খুব কঠিন শাসনে সুইট হোম পরিচালনা করতে শুরু করে। সব দাস দাসীদের তারা নানাভাবে অত্যাচার করতে থাকে। কিছুদিনের মধ্যেই সুইট হোমের দাস দাসীরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। তারা সুইট হোম থেকে গোপনে পালানোর পরিকল্পনা করে। কিন্তু তাদের পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়। তাদের ওপর কঠিন শাস্তি নেমে আসে। সিক্সো (Sixo) ছিল এই পরিকল্পনার নেতা, তাই তাকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার ব্যবস্থা করা হয়। সে পাগল হয়ে যায়, পরে তাকে গুলি করে মারা হয়। পল-এ ও পল-এফ কে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। পল-ডি (Paul D) কে কঠিন শাস্তি দিয়ে তার গলায় লোহার বালা ও শিকল পরিয়ে রাখা হয়। হ্যালি কে এমন অত্যাচার করা হয় যে, সে পাগল হয়ে কোথায় চলে যায় কেউ তা বলতে পারেনা।
স্কুলশিক্ষকের ভাগ্নেরা সেথিকে ধর্ষণ করে ও তার বুকের দুধ চুরি করে নেয়। সেথি মিসেস গার্নারের কাছে এ অন্যায়ের বিচার চায়, কিন্তু মিসেস গার্নারের তখন করার কিছুই ছিলনা। উপরন্তু সেথিকে গরুর চামড়ার চাবুক দিয়ে এমনভাবে চাপকানো হয় যে তার পিঠ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। সেথি এবার নিজে নিজেই পালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমে সে অতি গোপনে তার বাচ্চাদের পলাতক দাসদের সাথে একটি ওয়াগনে তুলে তার শাশুড়ির কাছে ১২৪ নম্বর বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় এবং রাতের বেলা সে বনের মধ্য দিয়ে একা একা পালিয়ে যায়। তখন সে পূর্ণ গর্ভবতী। তার পেটে জন্মের অপেক্ষায় প্রায় পরিপূর্ণ একটি বাচ্চা। এ অবস্থায় পালাতে তার কষ্ট হয়। তবুও সে বনের বিপদসংকুল পথ ধরে পালাতে থাকে।
বনের পথে চলতে চলতে সেথি একটি পাহাড়ের পাশে এসে থেমে যায়। তার প্রসব বেদনা শুরু হয়ে যায়। সে আর চলতে পারছেনা। পাহাড়ি রাস্তার ধারে একটি জলাভূমিতে সেথি বড় বড় ঘাসের মধ্যে শুয়ে পড়ে এবং অসহ্য যন্ত্রনায় কোঁকাতে থাকে। ঐ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল একজন সাদা ক্রীতদাসী মহিলা, অ্যামি ডেনভার তার নাম। তার গায়ের চামড়া সাদা হলেও সে একজন ক্রীতদাসী ছাড়া আর কিছুই ছিলনা। সেথির কোঁকানি শুনতে পেয়ে অ্যামি তার কাছে এগিয়ে যায়, এবং সেথির অবস্থা দেখে প্রথমে ভয় পেয়ে যায়। সে কালোদের মোটেই পছন্দ করত না বরং ঘৃণা করত। মেয়েটি একটু পাগলাটে ধরনের ছিল। সেথি বাচ্চা প্রসব করবে বুঝতে পেরে তার প্রতি অ্যামির মায়া হল।
অ্যামি ডেনভার সেথিকে অনেকটা জোর করেই পাশের একটি পরিত্যক্ত কুঁড়েঘরে নিয়ে যায় এবং সেখানে যথেষ্ট পরিশ্রম ও যত্ন করে সেথিকে সচল করে তোলে। পরে ওহিও নদীর পারে একটা নৌকায় সেথি একটি কন্যা সন্তান প্রসব করে। অ্যামি ডেনভারের নাম অনুসারে সেথি তার ছোট মেয়ের নাম রাখেন ডেনভার (Denver). সেথি ও তার বাচ্চাকে একাকী নদীর পাড়ে রেখে অ্যামি ডেনভার তার নিজের পথে হারিয়ে যায়। বাচ্চাকে কোনোরকম গরম কাপড়ে মুড়ে, সেথি নদীর কিনার ধরে রওনা হল। কিভাবে নদী পার হবে তার কোনো কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছিল না সে। হঠাৎ স্ট্যাম পেড (Stamp Paid) নামের এক মাঝির সাক্ষাৎ পেল সেথি, যার কাজই ছিল পলাতক দাসদের ওপারে পৌঁছে দিতে সাহায্য করা। মাঝি সেথিকে নৌকায় তুলে নিল এবং ওপারে পৌঁছে দিল। এই মাঝির সহায়তায় সেথি সিনসিনাটি শহরে ১২৪ নং বাড়িতে তার শাশুড়ির কাছে এসে পৌঁছল।
শাশুড়ী বেবি স্যাগস (baby suggs) তার পুত্রবধূ ও নতুন একটি নাতনি পেয়ে দারুন খুশি, কিন্তু ছেলে হ্যালিকে তাদের সাথে না দেখতে পেয়ে কিছুটা আহত হলো। সে নতুন শিশুটির এবং তার মা সেথির প্রয়োজনীয় সেবার ব্যবস্থা করল। সেথি ২৮ দিন তার শাশুড়ির যত্নে ও আদরে মুক্ত মানুষ হিসাবে মহাশান্তিতে বাস করল। কিন্তু ২৮ দিন পর সুইট হোমের স্কুলশিক্ষক, তার দুই ভাগ্নে, এলাকার বিচারক (শেরিফ), একজন দাস ধরা লোককে সাথে নিয়ে ১২৪ নং বাড়িতে এসে উপস্থিত। সেথি স্কুলশিক্ষকে দেখেই চমকে উঠল এবং ব্যাপার সব বুঝে ফেলল যে তাকে আবার সুইট হোমে ফিরে যেতে হবে, আবার তাকে ও তার সন্তানদের দাসত্বের শিকল পরতে হবে। সেথি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলল এবং সিদ্ধান্ত নিল, সে তার সব সন্তানকে নিজের হাতে হত্যা করবে, তারপর নিজে আত্মহত্যা করে সবাইকে চিরদিনের জন্য দাসত্ব থেকে মুক্তি দেবে, তবুও আর দাসত্ব বরণ করবে না।
সেই মোতাবেক খুব দ্রুত সে তার সব সন্তানদের নিয়ে কাঠ রাখার ঘরে ঢুকে পড়ল। প্রথমে সে তার ছেলেদের মেরে মেঝেতে ফেলে দিল, পরে করাত দিয়ে বড় মেয়ের গলা করাত দিয়ে কেটে ফেলল। বড় মেয়েকে বুকে জড়িয়ে রেখেই ছোট মেয়ের মাথা দেয়ালের সাথে ঠুকতে থাকল। বেবি স্যাগস আর স্ট্যাম পেড ছুটে এসে সেথিকে থামাল। ভাগ্যগুণে ছেলে দুটো তখনো বেঁচে ছিল। বেবি স্যাগস সেবা করে ছেলে দুটোকে বাচিঁয়ে তুলল। সেথি তখন সম্পূর্ণ উন্মাদ। ব্যাপার দেখে স্কুলশিক্ষক তার দলবল নিয়ে পালাল। সেথি তার মৃত বাচ্চাটিকে কবর দেয় এবং কবরের হেডস্টোন পাথরে লিখে দেয় Beloved বিলাভেড।
তারপর সেথি কে গ্রেফতার করা হলো। তার বিচার শুরু হলো এবং কয়েক বছরের জেল হয়ে গেল। সেথি তার ছোটো মেয়েটিকে নিয়ে জেলে চলে গেল। এলাকার সব লোক সেথিকে তার এই জঘন্য কাজের জন্য ঘৃণা করতে শুরু করলো। জেলখাটা শেষ হলে যখন সেথি ফিরে এল, তখনও সে সমাজের মানুষের কাছে ভয়াবহ ঘৃণিত মহিলা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রইল। কেউই তার প্রকৃত অবস্থা বোঝার চেষ্টা করল না। আশেপাশের মানুষজন সেথির পরিবারকে এড়িয়ে চলত। সেথি মি. বডুইনের (bodwin) সহযোগিতায় একটি রেস্তোরাঁয় রাধুনির কাজ জোগার করে নিল, এবং কারো সমালোচনা তোয়াক্কা না করে, তার শাশুড়ি, এক মেয়ে এবং দুই ছেলেকে নিয়ে নিজের মতো স্বাধীন জীবনযাপন করতে লাগলো। সেথির স্বামী হ্যালি আর ফিরে এলো না কখনোই। সমাজের লোকের অবজ্ঞা আর উপেক্ষা সত্ত্বেও সেথির দিন ভালোই যাচ্ছিলো।
এদিকে তাদের ১২৪ নং বাড়িতে নতুন এক উপদ্রব শুরু হলো ভূতের উপদ্রব। ভূতের আচরণ দেখে বোঝা গেল, ওটা একটা শিশু ভূত। সবাই অনুমান করল, ওটা মৃত বিলাভেডের অতৃপ্ত ক্ষুব্ধ আত্মা ছাড়া আর কিছু না। সেই ক্ষুব্ধ ভূত সময়ে অসময়ে নানা রকম ঝামেলা করতে শুরু করলো। যদিও ভূতটা কারো কোনো ক্ষতি করছে না, তবুও বাড়ির ছেলে মেয়েরা সবাই সর্বদা ভূতের ভয়ে আতংকিত। একদিন অকারণেই বেসিনের সামনের আয়নাটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। কিছুদিন পর কেকের উপর একটি ছোট হাতের তালুর ছাপ দেখতে পেয়ে সবাই অনুমান করল, ওটা ভূতের হাতের ছাপ। ভূতের ভয়ে সেথির দুই ছেলে হাওয়ার্ড (Howard) এবং বাগলার (Buglar) বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেল।
অবাক কাণ্ড হলো ডেনভার (Denver) সবথেকে বেশি ভয় পেলেও মনে মনে সে ওই ভূতের অপেক্ষায় থাকত।ডেনভার বাড়িতে খুব নিঃসঙ্গ ছিল। সে মনে করতো, ভূতটা তার বড় বোন বিলাভেড যে শুধু তাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য মাঝে মাঝে ওভাবে বাড়িতে আসে। তাই ভূতকে নিয়ে তার সমস্যা নেই, যদিও ভূত যখন আসে, তখন সে ভয় পায়। ভূতের প্রতি ভয় ও ভালোবাসা দুটোই একসাথে কাজ করতে থাকে ডেনভারের মধ্যে। বেবি স্যাগস কিছুই বলে না, সব কিছু দেখে, অনেক দিন ধরেই সে বিছানায় পড়ে আছে অসুস্থতায়। সে এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছে। তারপর একদিন বেবি স্যাগস মারা গেলো। সেথি ও ডেনভার আরো একাকী হয়ে পড়লো। অন্যদিকে ভূত টাও আর আসলো না। তারপর কেটে যায় বেশ কয়েক বছর।
ডেনভার এর বয়স এখন ১৮ বছর। হঠাৎ একদিন সেথি তাদের বাসায় নতুন এক অতিথিকে তার ঘরের বারান্দায় বসে থাকতে দেখে চমকে উঠলো। এই অতীথি তার সুইট হোমের হ্যালির বন্ধু পল-ডি। উনিশ বছর পরে তার সাথে সেথির দেখা। এক সময় সুইট হোমে তারা খুব কাছাকাছি ছিল। দুজন দুজনকে খুব কাছ থেকে চিনতো। একই সাথে মাঠে কাজ করেছে, একই সাথে পালানোর চেষ্টা করছে, একই সাথে শাস্তি ভোগ করেছে। সেই পুরান বন্ধ পল-ডি কে দেখে সেথি দারুন খুশি। পল ডি সেথি কে জানায়, স্কুলশিক্ষক পল ডি-কে ব্রান্ডিওয়াইন (Brandywine) নামের আরেকজন দাস মালিকের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল। ব্রান্ডওয়াইনকে হত্যার চেষ্টা করায় পল ডি- কে জর্জিয়ার (Georgia) একটি chain gang -এ অনেক অত্যাচার করা হয়। এই কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতার কারণে পল তার সব স্মৃতি, আবেগ এবং ভালবাসার ক্ষমতাকে নিজ হৃদয়ের tin tobacco box -এ তালাবন্ধ করে রাখেন। একদিন ঝড়বৃষ্টির মধ্যে পল ডি এবং chain gang এর বাকি সদস্যরা পালানাের সুযােগ পান এবং তারা পালান। এবার পল বসন্তের ফুটন্ত ফুল দেখতে দেখতে উত্তরের দিকে যেতে থাকেন এবং অনেক বছর পরে ঘটনাক্রমে তিনি সেথির বাড়িতে এসে পৌছান।
এভাবে পল ডি অনেক দিন পর, অনেক দূর্ভোগ সহ্য করে, অনেক পথ হেঁটে হেঁটে দীর্ঘ উনিশ বছর পর সে এসেছে বেবি স্যাগস ও সেথির সাথে দেখা করতে। এসেই সে শুনলো বেবি স্যাগস আর নেই। ৮ বছর আগে মারা গেছেন বেবি স্যাগস। পল ডির উপস্থিতিতে সেথির মনে প্রায় দুই দশক ধরে ঘুমন্ত থাকা স্মৃতিগুলো জেগে ওঠে। পল-ডি সেথির বাড়িতেই থাকা শুরু করে। সেথি এবং পল-ডি একসাথে একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দিকে এগোতে থাকে। সেথির ১২৪ নং বাড়িতে পল-ডি পরলো ভুতের খপ্পরে। সারা বাড়ি কাপিয়ে ভুত যখন পল ডি কে ভয় দেখাতে শুরু করলো, পলডি হাতের কাছে পাওয়া একটি টেবিল হাতে নিয়ে চারদিকে ঘুরিয়ে চিৎকার চেচামেচি করে ভুতকেই এমন ভয় পাইয়ে দিল যে ভুত নিজেই পালিয়ে বাচলো। ভূত চলে গেলে ডেনবারের মন খারাপ হয়ে গেলো। ডেনবার চাচ্ছিলো না পল ডি এ বাড়িতে থাকুক আর ভূতটি এ বাড়ি থেকে চলে যাক। পলডিয়ের সাথে সেথি সুইট হোমের অতীত স্মৃতি নিয়ে কথা বলছে, ডেনভার তখন নিজেকে বড় বেশি নিঃসঙ্গ মনে করছে। মনে করছে তার মা তাকে ফেলে অন্য জগতে চলে গেছে। অতএব, ডেনভার পলডি’র সাথে খারাপ আচারন করা শুরু করে। পলডি আহত হয়। সেথি ডেনবারকে শাসন করে। আস্তে ধীরে পলডির সাথে ডেনবারের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে আসে।
একদিন পলডি, সেথি ও ডেনবারকে নিয়ে কারনিভালের (Carnival) মেলাতে বেড়াতে যায়। পলডি তার সঞ্চিত ২ ডলার আনন্দের সাথে সেথি ও ডেনভারের পিছে খরচ করে ফেলে। ডেনভার খুব খুশি হয়। পলডি ডেনভারের কাছে অনেকটা প্রিয় হয়ে উঠে। মেলা শেষে তিন জনে হাত ধরাধরি করে বাড়ি ফেরে। তিনজন ১২৪ নং বাড়িতে পৌঁছে দেখতে পায়, বাড়ির সামনে গাছের গোড়ায় একটি কালো মেয়ে শুয়ে আছে। মেয়েটি খুবই দূর্বল। ঠিকমতো মাথা তুলতে পারছে না। বয়স ঠিক অনুমান করা যাচ্ছে না। ডেনভারের থেকে দু এক বছর বেশিও হতে পারে। আবার কমও হতে পারে। মেয়েটিকে ঘরে নিয়ে আপাতত তার যত্ন নেয়া হয়। মেয়েটি আস্তে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে। এই মেয়েটি নিজেকে বিলাভড নামে পরিচয় দেয়। এর বেশি কিছুই সে মনে করতে পারছে না। তার স্মৃতিতে আর কিছুই নেই। সে একটা নদী থেকে উঠে এসেছে।
দ্বিতীয়ত ডেনভার মেয়েটিকে ভালবাসে কারণ সে তার নিঃসঙ্গ জীবনের জীবন্ত সঙ্গী। বিলাভড ১২৪ নং বাড়িতে আশ্রয় পেয়ে যায়। শুধু পলডি বিলাভডকে পছন্দ করে না। কারণ সবার আকর্ষন এখন বিলাভেডের দিকে। পলডি বারবার জানার চেষ্টা করে মেয়েটির আসল পরিচয় কি। মেয়েটি কিছুই বলতে পারে না। পলডির উপর তার রাগ বাড়ে, সে পলডিকে ঘৃণা করতে থাকে। তাছাড়া পলডির সাথে সেথির ঘনিষ্ঠতা বিলাভেড ভালভাবে নেয় না। বিলাভেড চায় সেথি শুধু তার দিকে মনোযোগ দিক। বিলাভেড পলডি কে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে seduce করে এবং বাড়িতে তাকে পুতুলের মত ঘোড়াতে থাকে। এদিকে পলডি একদিন স্ট্যাম্প পেড এর কাছে সেথির পুরনো দিনের কাহিনী জানতে পারে। সেথি কীভাবে তার সব সন্তানদেরকে নিজের হাতে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল এবং বিলাভেড কে কীভাবে হত্যা করেছিল, কীভাবে সেথি জেলে গিয়েছিল এবং জেল থেকে ফিরে আসে কীভাবে সমাজের মানুষের ঘৃণা নিয়ে টিকে আছে, এ সবকিছু স্ট্যাম্পপেড পলডি কে জানিয়ে দেয়। প্রথমে পল ডি বিশ্বাস করেনি, কিন্তু পরে যখন বিশ্বাস করতে বাধ্য হলো, পলডি সেথিকে ভয় পেতে শুরু করলো। ১২৪ নং বাড়ি ছেড়ে পলডি চার্চে গিয়ে আশ্রয় নিল। সেথি তাকে কিছুই বলল না।
দিনে দিনে বিলাভেড এর নানা কার্যকলাপে সেথির ধারণা হয় যে এই বিলাভেডই তার মৃত মেয়ে বিলাভেড, যাকে সেথি একদিন দাসত্ব থেকে মুক্ত রাখতে নিজের হাতে হত্যা করেছিল। মৃত বিলাভেডের আত্মা আবার নতুনভাবে শারীরিক রূপ নিতে তার কাছে ফিরে এসেছে। ডেনভার নিজেও বিশ্বাস করতে থাকে যে বিলাভেড তার বড় বোন, যাকে তার মা একদিন গলা কেটে হত্যা করেছিল। বিলাভেডের প্রভাব ১২৪ নং বাড়িতে দিন দিন বাড়তে থাকে। সেথি সর্বদা এক ধরনের অপরাধবোধে ভুগতে থাকে। সে বিলাভেডকে বোঝাতে চেষ্টা করে কেন সে তাকে হত্যা করেছিল। কিন্তু বিলাভেড সেথির কোন যুক্তিই মানতে রাজি নয়। সেথি প্রানপণে তাকে খুশি রাখতে চেষ্টা করে, কিন্তু বিলাভেড কিছুতেই খুশি হয় না। সেথির ভয় কখন আবার বিলাভেড তাকে ছেড়ে পালিয়ে যায়। সে তার ফিরে পাওয়া মেয়েকে আর কোনোভাবেই হারাতে চায় না। তাই বিলাভেড যেমনটি চায়, তেমনটি করতে থাকে সেথি। এক সময় সেথি ক্লান্ত হয়ে পড়ে, কাজে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, তার চাকরি চলে যায়। বাড়িতে খাবারের অভাব দেখা দেয়, সেথি নিজে না খেয়ে বিলাভেডকে খাওয়ায়। বিলাভেড শুধু বসে বসে খায় আর মোটা হতে থাকে। এদিকে সেথি না খেয়ে খেয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। সেথি বিলাভেডকে প্রচন্ড ভালোবাসে এবং তাকে ভয় পায়। এক সময় সেথি অসুস্থ হয়ে বিছানা নেয়।
এদিকে ডেনভার পরে যায় বিপদে। যে মেয়ে কখনও বাড়ির বাইরে যায়নি, তাকেই চাকরির খোজে বাইরে বের হতে হয়। ডেনভার ১২ বছরের মধ্যে প্রথমবার বাড়ি ছাড়েন এবং সাহায্যের জন্য তার সাবেক শিক্ষিকা লেডি জনস (Lady Jones) এর কাছে যান। Community এর লোকজন তার পরিবারকে খাবার দিয়ে সাহায্য করে। তারপর ডেনভার একটা কাজ খুঁজতে শুরু করে। কিন্তু একটা কাজ পাওয়া তো এত সহজ না। অগত্যা সমাজের লোকদের দানে সে তার মা বোন ও নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে। মা সেথি এতোটাই দুর্বল ও সংসার বিমুখ যে ডেনভারকে নিয়ে তার কোনো মাথা বেথাই নেই। সে দিন রাত শুয়ে শুধু ভাবে কখন বুঝি বিলাভেড তাকে ফেলে পালিয়ে যায়। ডেনভার অসহায়ের মতো কাজের সন্ধানে এখানে সেখানে ঘুরতে ঘুরতে অবশেষে মি. বডুইনের বাড়িতে কাজ পেয়ে যায়।
একদিন মি বডুইন (Bodwin) গাড়ি নিয়ে ডেনভারকে নিতে আসে। শারিরিক ও মানুষিক ভাবে অসুস্থ সেথি মনে করে বডুইন তার মেয়েদের ধরে নিতে এসেছে। আসলে মি. বডুইনকে সেথি ভেবেছিল সেই স্কুলশিক্ষক। তাই সেথি এক টুকরো ধারালো বরফ খন্ড নিয়ে বডুইনকে হত্যা করতে ছুটে যায়, ডেনভার ছুটে এসে সেথিকে ধরে ফেলে এবং বডুইনকে রক্ষা করে। বডুইন বড়োই মহৎ প্রান মানুষ। সে সেথির এই আচরণে কিছু মনে করে না। তাকে মন থেকে ক্ষমা করে দেয়।
এদিকে সমাজে রটে যায় যে ১২৪ নং বাড়িতে একটি ভূতের আছর হয়েছে যার নাম বিলভেড। সে সেথির উপর ভর করেছে। এবং তাকে দিয়ে বডুইনকে হত্যা করার চেষ্টা করেছে। সেই ভূত সেথিকে চুষে চুষে খেয়ে ফেলছে। এক দিন এলা (Ella) নামের এক মহিলা প্রায় বিশ ত্রিশ জন মহিলাকে সাথে নিয়ে ১২৪ নং বাড়িতে আসে এবং এমন সব মন্ত্র পড়ে যে পর দিন আর বিলভেডকে ১২৪ নং বাড়িত দেখা যায় না। কেউ কেউ বলে বিলভেড বিস্ফারিত হয়ে হাওয়ায় মিশে গেছে। কেউ বলে তারা বিলাভেড কে দু-এক সেকেন্ড দেখেছে যার পর সে অদৃশ্য হয়ে গেছে। কেউ বলে তারা বিলাভেডকে বনের দিকে যেতে দেখেছে, তার মাথায় ঝুলছিল মাছের মতো চুল।
এদিকে খবর পেয়ে পল-ডি ছুটে এল ১২৪ নং বাড়িতে। সেথির অবস্থা দেখে তার খুব মায়া হলো। সেথির সাথে তার দীর্ঘ দিনের অতীত স্মৃতি মনে পরে গেলো। সে ভাবলো এই মুহূর্তে সত্যিকার বন্ধুর মতো সেথির পাশে থাকা তার একান্ত কর্তব্য। সে সেথির সেবা করতে লেগে যায়। ডেনভার কে বলল তোমার ভয় নেই, আসি তোমার মা’র পাশে আছি। তুমি নিশ্চিতে তোমার কাজ করো। সেথি পলের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল, জানো আমার বিলাভেড আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। ও আর কখনও আসবে না
বেশ কিছু দিন বিলাভেডকে নিয়ে কুসংস্কারআচ্ছন্ন সমাজে নানা রকম উদ্ভট কথা চালু ছিল। তারপর সমাজের লোকেরা সব ভুলে গেছে। ১২৪ নং বাড়ির লোকেরা যারা বিলাভেডকে ভালবাসতো তারা আরো কিছুদিন বিলাভেড কে মনে রেখেছিলো। তারপর তারাও একদিন বিলাভেডকে ভুলতে শুরু করলো। একদিন বিলাভেড সবার স্মৃতি থেকে হারিয়ে গেলো। এখন কেউ মনেই করতে পারে না বিলাভেড নামের কোনো একটি মেয়ে কোনো একসময় ১২৪ নং বাড়িতে ছিল। মানুষের মন এমনই। সে পুরাতনকে চিরতরে বিদায় দিয়ে নতুনকে নিয়ে তার চিরন্তন সংসার সাজায়।
Beloved Characters in bangla
Sethe : সেথি এই উপন্যাসের protagonist. তিনি একজন ক্রীতদাসী ছিলেন।
Beloved : সেথির বড় মেয়ে এবং শিশু অবস্থায় হত্যা করা সেথির মেয়ের ভুত। দাসত্বের হাত থেকে বাঁচাতে সেথি তাকে হত্যা করেছিল।
Denver : সেথির ছোট মেয়ে ডেনভার।
Howard : হাওয়ার্ড সেথির সম্ভবত বড় ছেলে।
Buglar : বাগলার সেথির সম্ভবত ছোট ছেলে, যারা ভুতের ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে ছিল।
Paul D : পল ডি সেথির একজন সহকর্মী দাস।
Halle : হ্যালি সেথির husband এবং সহকর্মী দাস।
Baby Suggs : সেথির শাশুড়ি বেবি স্যাগস। ইনিও একসময় দাস ছিলেন।
Mr. Garner : সুইট হোমের মালিক। মি. গার্নার একজন দাস মালিক (Slave Owner. সেথি তার সুইট হোমের একজন দাসী ছিলেন।
Bodwin : মি. বডুইন মহৎ প্রাণ মানুষ ও দয়ালু।
Stamp Paid : স্ট্যাম্প পেড হচ্ছে মাঝি।
Thank you so much sir…
ধন্যবাদ
Really good
খুব সুন্দর হয়েছে